মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিবেদন
১৪ মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার ৪০ জন
- আপলোড সময় : ০২-১১-২০২৫ ০৮:৫২:৪৬ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০২-১১-২০২৫ ০৮:৫২:৪৬ পূর্বাহ্ন
সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
জুলাই অভ্যুত্থানের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনকালে ১৪ মাসে ৪০ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের শিকার হয়েছেন। মাসের হিসেবে সবচেয়ে বেশি ঘটেছে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৯টি; আর গত তিন মাসে ১১টি। মানবাধিকার সংস্থা অধিকার গত বৃহ¯পতিবার দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে।
এদিকে, চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেড়েছে বলে তথ্য দিয়েছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
অধিকারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের আগস্টের ৯ তারিখের পর ওই মাসে দেশে কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- ঘটেনি। সেপ্টেম্বরে নয়জনের পর অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে একজন করে মারা যান। এরপর ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে পাঁচজন এবং ফেব্রুয়ারিতে তিনজন মারা যান। মার্চ ও এপ্রিলে মারা যান একজন করে। এর পর মে, জুন, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের শিকার যথাক্রমে চার, তিন, ছয়, তিন ও দুইজন। এই ৪০ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৯ জন গুলিতে মারা গেছেন, নির্যাতনে মারা গেছেন ১৪ জন, পিটিয়ে মারা হয়েছে সাতজনকে। আর গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে ১১ জন নিহত হয়েছেনÑ তিনটি ঘটনার জন্য পুলিশ, একটির জন্য সেনাসদস্য এবং সাতটি ঘটনার জন্য যৌথবাহিনীকে দায়ী করেছে অধিকার।
অধিকারের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ১৪ মাসে মব সন্ত্রাসের শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ১৫৩ জন। এই ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে গত সেপ্টেম্বরে ১৮টি। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে এ ঘটনা ছিল ১৭টি। গত তিন মাসে এমন ঘটনার সংখ্যা ৪৫টি। আর অন্তর্বর্তী সরকারের সময় ৭ হাজার ৯৭৯টি রাজনৈতিক সহিংসতার হিসাব দিয়েছে অধিকার। এ ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে চলতি বছরের মার্চে ৯৪৪টি। ৮৬২টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটে গত বছরের সেপ্টেম্বরে। ১৪ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হন ২৮১ জন। সবচেয়ে বেশি নিহত হন চলতি বছরের মার্চে ৪৪ জন, এর পর এক মাসে বেশি নিহত হন গত বছরের আগস্টের ২৩ দিনে ৩৩ জন। এ ছাড়া ১৪ মাসে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ২৪২টি ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে বেশি ঘটেছে গত সেপ্টেম্বরে ৩৪টি।
গণ-অভ্যুত্থানের পর ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন অধিকারের প্রতিষ্ঠাতা আদিলুর রহমান খান। বিতর্কিত তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দ-িত হয়ে কারাগারে ছিলেন।
এদিকে এমএসএফের প্রতিবেদন বলেছে, অক্টোবর মাসে ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে অজ্ঞাত লাশের সংখ্যা ছিল ৫২। এসব লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মরদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দি ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
এমএসএফের তথ্যানুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে ১৩ জন বন্দির মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।
এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।
এমএসএফ জানায়, অক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী-সমর্থক। আর সেপ্টেম্বরে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটে। - আমাদের সময়
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ

সুনামকন্ঠ ডেস্ক